Pandit Dharmadhar Mahasthvir -পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির
পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির – Pandit Dharmadhar Mahasthvir
পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির ১৯০১ সালের (১৩১৫ বঙ্গাব্দ) ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বর্তমান ফটিকছড়ি ধানাধীন ধর্মপুর গ্রামে হরচন্দ্র বড়ুয়ার ঔরসে ও প্রাণেশ্বরী বড়ুয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ সহোদয়ের মধ্যে মাননীয় মহাস্থবির জৈষ্ঠ। তিনি তের বৎসর বয়সে পিতাকে হারান এবং পিতার শ্রাদ্ধদিনেই ১৯১৪ সালের ২৬ জুন মহাত্নাধর্মকথিক মহাস্থবির মহোদয়ের উপাধ্যায়ত্বে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর গুরুর সঙ্গে তিনি বর্তমান রাউজান থানাধীন বিনাজুরী গ্রামের শ্মশান বিহারে অবস্থান করতে থাকেন। এখানে অবস্থনাকালে গুরুর নিকট ধর্মবিনয় শিক্ষা করেন এবং সাধারণ শিক্ষার জন্য সোনাইমুখী উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পালি শিক্ষায় আরও গভীরতা লাভের উদ্দ্যেশ্য ১৯২১ সালে একই থানাধীন আব্দুল্লাপুর গ্রামের আচার্য মাননীয় বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির মহোদয়ের নিকট গমণ করেন ও সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। ১৯২২ সালে তাঁর উপাধ্যায়ত্বে মাননীয় মহাস্থবির উপসম্পদা প্রাপ্ত হন।
বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য ও বিনয়ে আরও উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দ্যেশ্য ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি শ্রীলঙ্কা গমন করেন। এখানে পাঁচ বৎসর অবস্থানের পর ১৯৩২ সালের শেষের দিকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৩৪ সালের বঙ্গীয় সংস্কৃত পরিষদ কর্তৃক গৃহীত পালি অভিধর্ম উপাধি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় কলকাতাস্থ ধর্মাঙ্কুর বিহার ভিক্ষু শূণ্য থাকলে ড. বি, এম, বড়ুয়া (ড. বেণীমাধব বড়ুয়া) তাঁকে কলকাতা গমণের অনুরোধ করেন। কিন্তু স্বদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণপদে আসীন থাকায় তিনি ড. বড়ুয়ার অনুরোধ রক্ষা করতে পারেননি। ১৯৪০ সালে তাঁর সার্বিক প্রচেষ্টায় সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা গঠিত হয় এবং তিনি প্রথম এর সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মন্বন্ত্রের সময় অগ্গ মহাপণ্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে পটিয়া থানাধীন তেকোটা গ্রামে ‘সেবা সদন’ নামে একটি সাহায্যসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে এর পরিচালনার (সম্পদক) দায়িত্বও মহাস্থবিরের উপর বর্তায়। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতাস্থ ধর্মাঙ্কুর বিহারের বিহারাধক্ষ্য মনোনীত হন। ১৯৫৪-৫৬ সালে ব্রহ্মদেশে ষষ্ঠ মহাসঙ্গীতিকারক হিসাবে যোগদেন। ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি কলকাতায় ফিরে এসে বুদ্ধ জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করেন। ১৯৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান এবং ১৯৬৬ সালে হতে তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও সম্পাদনায় ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নালন্দা’ যথারীতি প্রকাশ হতে থাকে।
মাননীয় মহাস্থবির একজন বিশিষ্ট অনুবাদক হিসাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধির পথে যথেষ্ট এগিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রথম অনুদিত গ্রন্থ সমূল ধর্মপদের বঙ্গানুবাদ (১৯৫৪), দ্বিতীয় গ্রন্থ মহাপণ্ডিত রাহল সাংকৃত্যায়ন কৃত হিন্দীভাষায় রচিত ‘বৌদ্ধদর্শন’ এর বঙ্গানুবাদ (১৯৫৬), তৃতীয় সুত্তপিটকের দ্বিতীয় গ্রন্থ মধ্যমনিকায়ের দ্বিতীয় খণ্ডের বঙ্গানুবাদ (১৯৫৯), সুপণ্ডিত পঞ্ঞা স্বামী থের বিরচিত শাসন বংশের বঙ্গানুবাদ (১৯৫৬), প্রসিদ্ধ টিকা গ্রন্থ মিলিন্দ প্রশ্নের বঙ্গানুবাদ (১৯৭৪) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অধিমাস বিনিশ্চয় (১৯৬৩), সদ্ধর্মের পুনরুত্থান (১৯৬৪), বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন প্রভৃতি গ্রন্থ ছাড়াও তিনি ১৯৩১ সাল হতে সংঘ শক্তিতে, ১৯৫৯ সাল হতে জগজ্যোতিতে এবং ১৯৬৬ সাল হতে ‘নালন্দা’ ত্রৈমাসিক পত্রিকায় প্রায় প্রত্যেক সংখ্যায় প্রকাশিত প্রবন্ধাদি তাঁর মৌলিক জ্ঞানের পরিচায়ক।
এই যশস্বী সুপন্ডিতের জ্ঞানচর্চা, অধ্যবসায় স্থৈর্য ও প্রগাড় পাণ্ডিত্য বাঙালি বৌদ্ধদের সমাজ উন্নয়নে নবজীবনের সূচনা করেছে।
Thanks To Dr. Sumanapal Bhikkhu, Kolkata, West Bengal for the contents.